• বৃহস্পতিবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৫, ০৭:৩৪ অপরাহ্ন

খেলার মাঠ দখল করে জেলা প্রশাসনের বিজয়মেলা

ডেস্ক রিপোর্ট / ১৩৪ Time View
Update : মঙ্গলবার, ৩ ডিসেম্বর, ২০২৪

খেলার মাঠ দখল করে বছরজুড়ে মেলার আয়োজন রীতিতে পরিণত হয়েছিল চট্টগ্রামে। ২০২৩ সালে সেই রীতির ইতি টানে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন। ঘোষণা আসে ‘খেলার মাঠে মেলা নয়’। তবে এক বছরের মধ্যে সেই পুরনো রীতিতে ফিরছে জেলা প্রশাসন। এবার নিজেদের উদ্যোগে চট্টগ্রাম নগরীর আউটার স্টেডিয়াম মাঠে আবার বসছে মুক্তিযুদ্ধের বিজয় মেলা। আগামী ১০ ডিসেম্বর থেকে এখানে মেলা শুরুর কথা রয়েছে।

শহরে মাঠ সংকটের কারণে ২০২৩ সালে তৎকালীন জেলা প্রশাসক আবুল বশর মোহাম্মদ ফখরুজ্জামান আউটার স্টেডিয়াম মাঠে সব মেলা বন্ধের ঘোষণা দেন। আশপাশ থেকে সব ধরনের বৈধ-অবৈধ দখলদারকে উচ্ছেদ করেন। এরপর মাঠটি চট্টগ্রাম জেলা ক্রীড়া সংস্থা (সিজেকেএস) এক কোটি টাকা ব্যয়ে সংস্কার করে ফিরিয়ে আনে নতুন রূপে। বছরের পর বছর দখলে থাকা জীর্ণ এ খালি জায়গাটিকে সবুজ মাঠে রূপান্তর করা হয়। চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক পদাধিকার বলে সিজেকেএসের সভাপতি।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, কোটি টাকা ব্যয়ে সংস্কার করা খেলাধুলা-চর্চার প্রাণ আউটার স্টেডিয়ামের মাঠটি আবার ধ্বংসের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। খেলার মাঠে কেন মেলা করতে হবে এমন প্রশ্ন নগরবাসীর। অতীতে বছরজুড়ে নানা মেলার নামে মাঠ দখল করার কারণে বন্ধ ছিল ক্রীড়াচর্চা। মেলা করে মাঠটি ধ্বংস না করার আহ্বান ক্রীড়াপ্রেমীদের।

জেলা প্রশাসক ফরিদা খানম বলেন, বিজয় দিবস উপলক্ষে দেশব্যাপী এক দিনের জন্য মেলা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়। আর মন্ত্রণালয়টির উপদেষ্টা ফারুই-ই-আজমের বাড়ি যেহেতু চট্টগ্রামে, তাই এখানে সাত দিনের জন্য মেলা করার সিদ্ধান্ত হয়েছে।

উপদেষ্টা নিজেই নেওয়াজ নামে একজনকে দায়িত্ব দিয়েছেন। তবে বলতে পারেন, মেলাটি জেলা প্রশাসনের উদ্যোগেই হচ্ছে, যেহেতু আমরা সবকিছুই নিয়ন্ত্রণ করব। খোঁড়াখুঁড়ি হলেও মেলা শেষে আমরা মাঠের স্বাভাবিক পরিবেশ ফিরিয়ে আনব।

চট্টগ্রাম জেলা ক্রীড়া সংস্থার (সিজেকেএস) সংশ্লিষ্টরা জানান, জাতীয় ও আন্তর্জাতিক মানের খেলোয়াড় তৈরি করতে চট্টগ্রামে খেলার মাঠ দখলমুক্ত করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল। চট্টগ্রাম থেকে জাতীয় মানের খেলোয়াড় তৈরি করতে হলে ক্রিকেট, ফুটবল, হকিসহ আলাদা আলাদা পাঁচটি অনুশীলন মাঠ প্রয়োজন। বিশেষায়িত মাঠ না হলে ক্রীড়াঙ্গনে প্রকৃত সুফলপ্রাপ্তি দুরূহ হয়ে উঠবে। আগের জেলা প্রশাসক এ বিশেষায়িত মাঠের গুরুত্ব অনুধাবন করে মেলামুক্ত মাঠ করে খেলার জন্য উপযোগী করেছিলেন। এখন কেন নতুন করে এ মাঠে মেলা করার অনুমতি দেওয়া হচ্ছে, তা আমাদের জানা নেই।

জানা যায়, এক সময় বছরজুড়েই মেলা চলত আউটার স্টেডিয়ামের মাঠে। নগরীর প্রাণকেন্দ্র হওয়ায় এ খেলার মাঠেই সবচেয়ে বেশি মেলার আয়োজন করে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান। এ মাঠে ক্যাটল এক্সপো থেকে শুরু করে বিজয় মেলা, বৃক্ষ মেলা থেকে শুরু করে তাঁত মেলাসহ এমন কোনো আয়োজন নেই, যেটি আউটার স্টেডিয়ামে হতো না। এ মাঠসহ শহরের বিভিন্ন খেলার মাঠ মেলামুক্ত রাখার দাবি চট্টগ্রামবাসীর দীর্ঘ দিনের। নাগরিকদের দাবির সঙ্গে ২০২৩ সালে খেলার মাঠে মেলা না করার বিষয়ে একমত হয় জেলা প্রশাসন। ওই সময় আউটার স্টেডিয়াম মাঠের চারদিকে সীমানা দিয়ে চিহ্নিত করা হয়। আউটার স্টেডিয়াম মাঠ উন্মুক্ত করে দেওয়া হয় খেলার জন্য। গত ২৮ নভেম্বর থেকে মাঠটিতে আবার বিজয় মেলা করার জন্য বাঁশ গেড়ে স্টল নির্মাণের প্রস্তুতি দেখা যায়। যা নিয়ে ক্রীড়াবিদ থেকে শুরু করে নগরবাসীর মনে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।

মাঠটিতে নিয়মিত ফুটবল খেলতে আসেন নগরীর মহসিন স্কুলের শিক্ষার্থী রাব্বি চৌধুরী। তিনি বলেন- মেলা হোক সমস্য নেই, কিন্তু খেলার মাঠ দখল করে কেন মেলা করতে হবে? চট্টগ্রামে আরও অনেক জায়গা আছে মেলা করার।

মেলা আয়োজক কমিটির সদস্য সচিব নেওয়াজ হক বলেন, আমরা জেলা প্রশাসন থেকে অনুমতি পেয়েছি মেলা করার। সে অনুযায়ী প্রস্তুতি চলছে।

খেলার মাঠে মেলার বিষয়ে তিনি বলেন, ৫ আগস্টের পর উন্মুক্ত হওয়ায় মাঠটি নষ্ট হয়ে গেছে। এ ছাড়া কিছুদিন আগে মুনিরিয়া তবলিগের শত শত গাড়ি মাঠটিতে পার্কিং করায় অবস্থা আরও শোচনীয় হয়ে উঠেছে। মাঠের কোনো ক্ষতি না করেই আমরা মেলার আয়োজন করবো।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category