• বুধবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৫, ০৯:৫২ অপরাহ্ন

নীলফামারীতে হস্তশিল্পে স্বাবলম্বী হচ্ছেন নারীরা

ডেস্ক রিপোর্ট / ১০৭ Time View
Update : বুধবার, ১৮ ডিসেম্বর, ২০২৪

নীলফামারীর খোকশাবাড়ি ইউনিয়নের নারীরা এখন হোগলাপাতার হস্তশিল্প তৈরি করে স্বাবলম্বী। একসময় দারিদ্র্যের মধ্যে বসবাসকারী এই নারীরা আজ ইউরোপ, আমেরিকা, জাপান, চীন ও অস্ট্রেলিয়াসহ ২৮টি দেশে পণ্য রপ্তানি করছেন। প্রাকৃতিক উপাদান দিয়ে তৈরি পরিবেশবান্ধব এসব পণ্যের চাহিদা বেড়েছে আন্তর্জাতিক বাজারে। সরকারি ও বেসরকারি প্রশিক্ষণের মাধ্যমে তারা ব্যবসায় সফল হয়ে পরিবারে আর্থিক অবস্থার উন্নতি ঘটিয়েছেন।

হোগলাপাতা, যা বাংলায় হোগলধারী পাতা নামে পরিচিত। ইংরেজিতে এটিকে ‘ক্যাট টেইল’ বা বিড়ালের লেজ বলা হয়। এই পাতাটি শুকিয়ে বিশেষ কৌশলে প্যাঁচিয়ে প্রথমে দড়ি তৈরি করা হয়, যা পরে নানা কারুশিল্পের পণ্য তৈরি করতে ব্যবহার করা হয়। পণ্য তৈরির জন্য লোহা বা জিআই তারের ডাইস ব্যবহৃত হয়। এটি পণ্যের সঠিক মাপ ও আকার নিশ্চিত করে। একবার তৈরি হলে, পণ্যগুলো কারখানার প্রতিনিধির মাধ্যমে বাজারে পৌঁছানো হয়। এর পর ওই পণ্যগুলো বিভিন্ন দেশে রপ্তানি করা হয়।

এতে দারুণ সফলতা পেয়েছেন গ্রামের নারীরা। তাদের তৈরি হোগলাপাতার পণ্য এখন ইউরোপ, আমেরিকা, চীন, জাপান, জার্মানি ও অস্ট্রেলিয়াসহ অন্তত ২৮টি দেশে রপ্তানি হচ্ছে। নারীরা তাদের হাতে তৈরি এসব পণ্য নিয়ে স্বাবলম্বী হয়েছেন। এতে একদিকে যেমন তাদের জীবনযাত্রার মান বেড়েছে। অন্যদিকে তাদের পরিবারের আর্থিক অবস্থাও উন্নত হয়েছে।

নারী উদ্যোক্তা রোকসানা বেগম, তার অভিজ্ঞতা শেয়ার করে বলেন, ‘আমার স্বামী মানুষের বাসায় কাজ করে। আগে তার এক দিন কাজ না থাকলে আমাদের খাওয়ার চিন্তা থাকত। কিন্তু এখন ভালো আছি। সংসারের অভাব দূর হওয়ার পাশাপাশি সন্তানের চাওয়া-পাওয়া পূরণ করতে পারি।’ একইরকম অভিজ্ঞতার কথা বলেছেন জোসনা বেগম- ‘আগে সংসারে অভাব ছিল। এই কাজ শুরুর পর সংসারের অভাব দূর হয়েছে। সন্তানদের চাহিদাও পূরণ করতে পারি। আর সবচেয়ে ভালো কথা, কাজ করতে বাইরে যেতে হয় না, বাড়িতে বসেই কাজ করা যায়।

মর্জিনা বেগম বলেন, ‘আমরা কখনো কল্পনাও করিনি যে, বাড়িতে বসে এমন কাজ করতে পারব এবং টাকাও আয় করতে পারব। এই কাজ শুরুর পর অনেক পরিবারের জীবিকা সচল হয়েছে। আমরা যারা লেখাপড়া জানি না, তাদের জন্য এটি একটি দুর্দান্ত সুযোগ। এখন আমরা অনেক ভালো আছি।’

এ কাজে নারীদের পাশে দাঁড়িয়ে তাদের উৎসাহিত করেছেন আর্টিশিয়ান হাউজ বিডি. লিমিটেডের প্রোডাকশন ম্যানেজার হামিদুল হক মোল্লা। তিনি বলেন, ‘আমরা নোয়াখালী থেকে কাঁচামাল নিয়ে আসি এবং আমাদের প্রশিক্ষিত কর্মীদের হাতে সেগুলো পৌঁছে দেওয়া হয়। পণ্য তৈরির পর আমাদের টিম এসে সেগুলো চেক করে নেয়। পরে সেগুলো দেশে এবং বিদেশে রপ্তানি করা হয়।’

এই হস্তশিল্পের একটি বিশেষত্ব হলো, হোগলাপাতা খুব সহজে পচনশীল হওয়ায় এটি পরিবেশে কোনো ক্ষতি করে না। বিশ্বব্যাপী পরিবেশ দূষণের প্রবণতা বৃদ্ধি পাওয়ায় হোগলাপাতার তৈরি পণ্য আন্তর্জাতিক বাজারে অত্যন্ত জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। তালপাতা, খেজুরপাতা ও গোলপাতা জাতীয় অন্যান্য প্রাকৃতিক উপাদানেও তৈরি পণ্যগুলো পরিবেশবান্ধব এবং পুনর্ব্যবহারযোগ্য হওয়ায় তা আন্তর্জাতিক বাজারে বেশি চাহিদা পাচ্ছে।

জেলার কুটিরশিল্পের সভাপতি আব্দুল মমেন জানান, বর্তমানে জেলার মধ্যে সরকারি নিবন্ধিত ৪ হাজার ৬০০ জন উদ্যোক্তা রয়েছেন। এ ছাড়া বিভিন্ন প্রশিক্ষণ নিয়েও ব্যক্তিগতভাবে আরও ২ হাজার উদ্যোক্তা তৈরি হয়েছে। তিনি বলেন, ‘এই প্রতিষ্ঠানগুলো যদি সঠিকভাবে কাজ করতে থাকে, তবে জেলায় কর্মসংস্থানের কোনো অভাব থাকবে না।’

বিসিক জেলা কার্যালয়ের উপব্যবস্থাপক নুরেল বলেন, ‘হোগলাপাতার পণ্য তৈরির মাধ্যমে গ্রামের অনেক নারী স্বাবলম্বী হয়েছেন। যারা নিজেরাই উদ্যোক্তা হয়ে পণ্য তৈরি করতে চান, তাদের জন্য ঋণ এবং অন্যান্য সহায়তা দেওয়ার ব্যবস্থা করা হবে। এর পাশাপাশি, তারা যদি তাদের পণ্য দেশের বিভিন্ন মেলায় প্রদর্শন করতে চান। তবে আমরা ওই সুযোগও দেব। বিদেশি ক্রেতাদের সংযুক্ত করতেও সহযোগিতা করব।’

জেলা মহিলা অধিদপ্তর, সমাজসেবা এবং কুটির শিল্পসহ বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান থেকে প্রতি বছর প্রায় ১ হাজার ৫০০ নারী-পুরুষ কারিগরি প্রশিক্ষণ নিয়েছেন। এ ধরনের প্রশিক্ষণগুলো মানুষের জীবনে একটি নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছে। দারিদ্র্য বিমোচনে সহায়ক ভূমিকা পালন করছে।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category