• বুধবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৫, ০৪:৪৫ পূর্বাহ্ন

বাজার থেকে হঠাৎ উধাও বোতলজাত সয়াবিন তেল

ডেস্ক রিপোর্ট / ১৪৬ Time View
Update : শনিবার, ৭ ডিসেম্বর, ২০২৪

রাজধানীর কদমতলীর তুষারধারা আবাসিক এলাকার ছয়টি দোকান ঘুরে বোতলজাত সয়াবিন তেলের দেখা পাননি বেসরকারি চাকরিজীবী মো. এনামুল হক। শেষমেশ রান্নার জন্য সামান্য পরিমাণ খোলা সয়াবিন তেল কিনে বাসায় ফিরতে হয়েছে তাকে। একইভাবে বিপত্তিতে পড়তে হয়েছে এলাকার আরেক ক্রেতা মো. সাইফুল ইসলামকেও। এলাকার বড় বাজার থেকে শুরু করে পাড়ার মুদি দোকানগুলো ঘুরেও এক বা দুই লিটারের সয়াবিন তেলের বোতল কিনতে পারেননি ক্রেতারা।

কথা হলে এনামুল হক বলেন, কোনো দোকানেই পাওয়া যাচ্ছে না। অতীতেও এমনটা হয়েছে। দাম বাড়ানোর জন্য বাজার থেকে তেল গায়েব করে ফেলা হয়েছে। অভিযানগুলোতে সয়াবিনের লুকানো মজুদ বেরিয়ে এসেছে। এভাবেই চলে। এগুলো কি থামবে না? আর কত? বাসায় রান্নার জন্য তেল কিনতে দোকান থেকে দোকানে ঘুরতে হচ্ছে।

সাইফুলও বলেন, এটা তো আগেও দেখেছি। বোতলজাত তেল উধাও। এ নিয়ে আগেও অনেক কিছু হয়েছে। তারপরও এগুলো বন্ধ হচ্ছে না। আর আমাদের ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। এ দিকে সরকারের নজর দেওয়া প্রয়োজন।

জানতে চাইলে এ এলাকার বৈশাখী জেনারেল স্টোরের খুচরা বিক্রেতা মো. খোকন বলেন, কোম্পানির লোকদের বলতে বলতে বিরক্ত হয়ে গেছি। বারবার বলার পরও তারা চাহিদা অনুযায়ী বোতলজাত তেল সরবরাহ করছে না। বলছে তেল নেই। কারণ জানতে চাইলে সেটাও বলছে না।

এদিকে একেবারেই যে বোতল মিলছে না তা নয়। কোনো কোনো বিক্রেতার কাছে অল্পসংখ্যক বোতল পাওয়া যাচ্ছে। কিন্তু বিক্রেতাদের অভিযোগ, এই অল্পসংখ্যক বোতল পেতে কোম্পানির অন্য পণ্য অর্ডার দিতে তাদেরকে বাধ্য করা হয়েছে।

সাদ্দাম মার্কেটের খুচরা মুদি পণ্য বিক্রেতা মো. মিলন হোসেন বলেন, কোম্পানিগুলো বোতল দেওয়া বন্ধ করে দিয়েছে। যদিও বা কিছু পাওয়া যায়, সে জন্য ওই কোম্পানির সরিষার তেল, চিনিসহ অন্য পণ্য অর্ডার দিতে হয়। নইলে বোতল মেলে না। আমরাও নিরুপায়, ঘনিষ্ঠ ক্রেতাদের ধরে রাখতে তেলের বোতল রাখতে হয়। নইলে ক্রেতা হারাতে হবে আমাদের।

কারওয়ান বাজারেও একই চিত্র বলে জানান এখানকার কিচেন মার্কেটের ঢাকা জেনারেল স্টোরের খুচরা বিক্রেতা মো. মুজাহিদ। বলেন, বিগত বেশ কিছু দিন ধরে তেলের বোতলের সংকট প্রকট হয়েছে। অনেকক্ষেত্রে বোতল পেতে আগের চেয়ে বেশি দামে কিনতে হচ্ছে। বাজারে কোম্পানিগুলো যেটুকু সরবরাহ করছে তা মুহূর্তেই শেষ হয়ে যাচ্ছে। একজন ব্যবসায়ী ভাগে ১ থেকে ২ কার্টন (প্রতি কার্টনে ৪টি ৫ লিটারের বোতল) পাচ্ছে। যেখানে একজন ব্যবসায়ীর দৈনিক ১০-২০ কার্টন প্রয়োজন। আর যাদের কাছে বড় ক্রেতা রয়েছে, তাদের তো আরও বেশি দরকার হয়।

একই চিত্র বাড্ডা, শেওড়াপাড়াসহ রাজধানীর অন্যান্য এলাকাগুলোতেও। খুচরা বিক্রেতারা বলছেন, এক এক করে সব কোম্পানিই তেল সরবরাহ একেবারেই কমিয়ে দিয়েছেন। ডিলাররা তাদেরকে বলেছেন, দাম বাড়তে পারে। এ জন্য সরবরাহ কম।

তবে ডিলারদের সঙ্গে কথা হলে তারা ভিন্ন কথা বলছেন। তারা বলছেন, সরবরাহ চালু রয়েছে। কারওয়ান বাজারের পুষ্টি ব্র্যান্ডের একজন ডিলার দাবি করেন, অন্যান্য কোম্পানিগুলো সরবরাহ কমাতে পারে। কিন্তু তারা সরবরাহ স্বাভাবিক রাখার চেষ্টা করছেন। বোতলজাত সয়াবিনের সরবরাহ সংকটের বিষয়ে একাধিক কোম্পানির সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে এ বিষয়ে তারা কোনো বক্তব্য দেয়নি।

এদিকে খুচরা বিক্রেতাদের মধ্যে অনেকে আবার অভিযোগ করছেন, অনেকে বোতলজাত তেল লুকিয়ে রেখে নিজস্ব ক্রেতার কাছে বাড়তি দামে বিক্রি করছেন। কেউ কেউ বেশি দাম পাওয়ার জন্য বোতল তেল খোলা হিসেবে বিক্রি করছেন। অপরদিকে খোলা তেলের বাজারেও বেজায় উত্তাপ।

সরকারি সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশ অব বাংলাদেশের (টিসিবি) বাজার প্রতিবেদন অনুযায়ী, গতকাল রাজধানীর খুচরা বাজারে খোলা সয়াবিন তেলের লিটার বিক্রি হয়েছে ১৬৫-১৬৮ টাকা এবং পাম সুপার তেলের লিটার বিক্রি হয়েছে ১৬২- ১৬৩ টাকা দরে। এক মাস আগে যা বিক্রি হয় যথাক্রমে ১৬৩-১৬৫ এবং ১৫৮-১৬০ টাকা। আর গত বছর এ দুই তেলের দাম ছিল যথাক্রমে ১৫০-১৫৫ এবং ১৩৫-১৪০ টাকা লিটার। অপরদিকে বোতলজাত সয়াবিন তেলের বর্তমান মূল্য ১৬৭ থেকে ১৭০ টাকা।

কথা হলে বাংলাদেশ পাইকারি ভোজ্যতেল ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি গোলাম মাওলা বলেন, সরবরাহ নিয়ে আমরা কিছু বলতে পারবো না। এগুলো কোম্পানি নিয়ন্ত্রণ করে। খোলা তেলের বাজারে সরবরাহ ঠিক আছে, দামও বাড়েনি। তিনি আরও বলেন, আগে সরকার সকল পক্ষের সঙ্গে নিয়মিত বৈঠক করতো। এতে চাহিদা, মজুদ, সরবরাহের তথ্য পরিষ্কার থাকতো। সে অনুযায়ী উদ্যোগ নেওয়া হতো। এখন বৈঠক হয় না। সামনে রমজান মাস আসছে। কিন্তু সেভাবে বৈঠকে বসা হচ্ছে না। এমনটা হলে রমজানে পণ্য সরবরাহে বিশৃঙ্খলা দেখা দিতে পারে।

বাজারের এমন পরিস্থিতিকে মোটেও স্বাভাবিকভাবে দেখছেন না বাজার বিশ্লেষকরা। তাদের মতে, দাম বাড়াতেই বাজারে সংকট তৈরি করা হয়েছে।

ভোক্তা অধিকার সংগঠন কনজ্যুমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সহসভাপতি এসএম নাজের হোসাইন বলেন, কোম্পানিগুলো মূলত বিশ্ববাজারের মূল্য বৃদ্ধির অজুহাত দিয়ে দাম বাড়ানোর পাঁয়তারা করছে। ব্রাজিল, আর্জেন্টিনা থেকে তেল আসতে চার-পাঁচ মাস সময় প্রয়োজন। সুতরাং এখন যে তেল রয়েছে সেগুলো আগের কেনা। অতএব বিশ্ববাজারের দোহাই দিয়ে এখনই দাম বাড়ানোর যৌক্তিকতা নেই। আর দাম বাড়ানোর জন্য সরবরাহ বন্ধ করে সংকট তৈরি করে ভোক্তাদের কষ্ট দেওয়াটাও অন্যায়। আসলে ভোজ্যতেলের বাজার হাতে গোনা কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের কব্জায়। এ ক্ষেত্রে বাজারে প্রতিযোগিতার মারাত্মক ঘাটতি রয়েছে। এ জন্যই এমন পরিস্থিতি তৈরি হচ্ছে।

নাজের হোসাইন বলেন, ট্যারিফ কমিশন যে মূল্য পর্যালোচনা করে সেটিও ব্যবসায়ীদের সঙ্গে বসে করে। তারপর যেটা ঘোষণা দেওয়া হয়, সে দামে বিক্রি হয়। মূল্য সমন্বয়ের বিষয়টি পরিষ্কার নয়, এটি আরও খোলাখুলি হওয়া উচিত। আমরা ক্যাব অনেক দিন ধরে বলে আসছি এখানে ক্যাবের প্রতিনিধি, গণমাধ্যমকেও রাখা উচিত। তাহলে কিসের ওপর ভিত্তি করে দাম কমানো ও বাড়ানো হয় সেটা পরিষ্কার হবে।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category