সিলেট জেলা পরিষদের মালিকানাধীন বিয়ানীবাজার পৌরশহরের প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত একমাত্র পুকুর পাড় দখলের মহোৎসব চলছে। মাত্র কয়েক দিনের ব্যবধানে এই পুকুরের পশ্চিম এবং দক্ষিণের দুই পার দখল করে দোকান কোঠা নির্মাণ করেছে একটি চক্র। রাতের আঁধারে জায়গা দখল করে দোকান কোটা নির্মাণ করায় কে এর সাথে জড়িত রয়েছে সেটা লোক চক্ষুর আড়ালেই থেকে যাচ্ছে।
জানা যায়, বিয়ানীবাজার পৌরশহরের ফতেহপুর মৌজার এই পুকুরটির পূর্বদিকে মেইন রোড সংলগ্ন পুকুর পাড়ে বেশ কয়েকটি দোকান কোটা নির্মাণ করা হয়। শুরুতে একসনা বন্দোবস্তের ভিত্তিতে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের নাম করে এসব দোকান কোটা নির্মাণ করেন সংশ্লিষ্টরা। ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা এখানে ব্যবসা করলেও মূলত পকেট ভারী হয় পর্দার আড়ালে থাকা প্রভাবশালীদের। তারা মাসিক ভাড়ার ভিত্তিতে এখানে ব্যবসা করছেন বলেও অভিযোগ রয়েছে । এই পুকুরের পূর্ব পাশের একাধিক দোকানের দখল বহুবার কেনাবেচা হয়েছে। বিগত কয়েক বছর জেলা পরিষদ পুকুরের ওই পাড়টির বন্দোবস্ত নবায়ন বন্ধ ছিল। পরে অবশ্য সরকারি প্রয়োজনে উচ্ছেদের শর্তে নবায়ন বন্দোবস্ত করা হয় বলে জানান জেলা পরিষদের সার্ভেয়ার জাবেদ আহমদ। তিনি বলেন, বিগত দিনে জেলা পরিষদের এই পুকুরের উপর বহুতল বিপনী বিতান নির্মাণের উদ্যোগ নেয়া হয়েছিল। সয়েল টেস্ট, নকশা প্রণয়নসহ আনুসাঙ্গিক অনেক কাজই তখন সম্পন্ন করা হয়। পরবর্তীতে এই প্রকল্প নানা কারণে আটকে যায়। তাই রাজস্ব আদায়ে সরকার পুকুরের পাড়ের বন্দোবস্ত নবায়ন শুরু করে। তবে সেটা অস্থায়ীভাবে দেওয়া হয়েছে। শর্ত ছিল জেলা পরিষদ যখন পুকুর কিংবা পুকুর পাড়কে কেন্দ্র করে কোন প্রকল্প গ্রহণ করবে তখন সাথে সাথেই লিজ গ্রহীতা সেখান থেকে সরে যাবেন।
সরজমিন দেখা যায়, শহরের একমাত্র পুকুরের তলদেশ বন্দোবস্ত এনে ভরাট করা হয়েছে পুকুর পাড়। পুকুর পাড়ের পার্শ্ববর্তী এলাকাও ময়লা-আবর্জনা ফেলে কৌশলে ভরাট করে ইতিমধ্যে ৭ টি দোকান কোঠা নির্মাণ করেছে একটি প্রভাবশালী চক্র। ভরাটকৃত স্থানে দোকানকোটা ভাড়া নিয়ে ব্যাবসা করছেন কিছু লোক। পুকুরের শ্রেণী পরিবর্তন করে চারপাশে দোকানকোটা নির্মাণ হওয়ায় শহরজুড়ে অগ্নিকান্ড ঝূঁকি বৃদ্ধি পেয়েছে। কারণ পৌরশহরে সৃষ্ট কোন অনাকাংখিত ঘটনায় এই পুকুর থেকে পানি সরবরাহ করে ফায়ার সার্ভিস। গত ঈদের পরবর্তী সময় থেকে এ পর্যন্ত ৭টি দোকানকোটা নির্মাণ করা হয়েছে। দখলদাররা জেলা পরিষদ থেকে বন্দোবস্ত আনার নাম করে এসব দোকানকোটা নির্মাণের কথা বললেও বাস্তবে এখন পর্যন্ত কাউকে লিজ দেওয়া তো দুরের কথা স্থাপনা নির্মাণের অনুমতি দেয়নি সিলেট জেলা পরিষদ কর্তৃপক্ষ। প্রতিবেদক এর কাছে দোকানকোটা নির্মাণের জন্য কাউকে পুকুর পাড় বন্দোবস্ত দেয়া হয়নি বলে জানান সিলেট জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী সন্দীপ কুমার সিংহ।
এ বিষয়ে সিলেট জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী সন্দ্বীপ কুমার সিংহ বলেন, আমরা কয়েক বছর আগে অস্থায়ী সময়ের জন্য একজনকে একশনা লিজ দিয়েছিলাম। যাতে জেলা পরিষদের পক্ষ থেকে কোন প্রকল্প গ্রহণ করলে সাথে সাথেই লিজ গ্রহীতা সেখান থেকে চলে যান। এরপর আজ পর্যন্ত লিজ নবায়ন করা হয়নি এবং কাউকে নতুন করে লিজ দেওয়া হয়নি।আমরা ইতিমধ্যে বিয়ানীবাজারে অবস্থিত জেলা পরিষদের পুকুরকে কেন্দ্র করে একটি প্রকল্প গ্রহণ করেছি। প্রকল্পের কাজ যখন শুরু হবে তখন সবাইকে সেখান থেকে উচ্ছেদ করা হবে। তাছাড়া আমরা জেলা পরিষদের পক্ষে দোকানকোটা তৈরীর জন্য জমি বন্দোবস্ত দেইনি। বিষয়টি নিয়ে অনেক অভিযোগ পেয়েছি। অভিযোগের ভিত্তিতে আমরা ইতিমধ্যে পুকুর পাড়ে কাটা তারের বেড়া দিয়েছি। যাতে ভবিষ্যতে আর কেউ সেখানে কোন ধরনের স্থাপনা করতে না পারে।
এদিকে শনিবার দুপুরে বিয়ানীবাজার পৌর শহরের কলেজ রোড মোড়ে জেলা পরিষদের পুকুরপাড় দ্রুত সময়ের মধ্যে দখলমুক্ত করতে বিয়ানীবাজার গণঅধিকার ফোরাম এর ব্যানারে মানববন্ধন করা হয়েছে। মানববন্ধন থেকে পরিবেশ রক্ষায় এবং পৌরসহরের সৌন্দর্য বৃদ্ধির জন্য দলমত নির্বিশেষে সকলকে এগিয়ে আসার আহবান জানানো হয়। তাছাড়া দ্রুত সময়ের মধ্যে জেলা পরিষদের পুকুরপাড় দখলমুক্ত করতে প্রশাসনের কঠোর হস্তক্ষেপ চাওয়া হয়। তা না হলে বিয়ানীবাজার উপজেলার সর্বস্তরের জনগণকে নিয়ে কঠোর কর্মসূচি দেওয়া হবে বলে জানান আয়োজকরা।