আসন্ন ২০২৬ বিশ্বকাপের দক্ষিণ আমেরিকা অঞ্চলের বাছাইপর্বে ভেনিজুয়েলার বিপক্ষে ১-১ গোলে ড্র করে মাঠ ছাড়তে হয়েছে পাঁচ বারের বিশ্বচ্যাম্পিয়ন ব্রাজিলের। যেখানে রিয়ালের ফরোয়ার্ড ভিনিসুয়স জুনিয়রের পেনাল্টি মিস ব্রাজিলকে জয়বঞ্চিত করে। ভিনির পেনাল্টি মিসের আগে দ্বিতীয়ার্ধে ভেনেজুয়েলার বদলি খেলোয়াড় টেলাস্কো সেগোভিয়ার দ্রুতগতির গোল প্রথমার্ধে সেলেসাওদের হয়ে রাফিনিয়ার করা গোলে পাওয়া ব্যবধান মুছে দেয়।
বৃহস্পতিবার (১৪ নভেম্বর) রাতে হওয়া ম্যাচটিতে ব্রাজিল বলের দখলে আধিপত্য দেখায়, তবে ১১টি গোলের সুযোগ তৈরির পরও গোল করতে ব্যর্থ হয়। ৬০ শতাংশের বেশি সময় বলের দখল রাখা সত্ত্বেও ভেনেজুয়েলার প্রতি-আক্রমণে প্রায়ই ব্রাজিলের রক্ষণ ভেঙে পড়তে দেখা যায়।
প্রথমার্ধের ৪৩তম মিনিটে রাফিনিয়া চমৎকার এক বাঁ পায়ের ফ্রি-কিক থেকে গোল করে ব্রাজিলকে এগিয়ে দেন। এটি বিশ্বকাপ বাছাইপর্বে ১৯ বছর পর ফ্রি-কিক থেকে ব্রাজিলের প্রথম গোল। এর আগে ২০০৫ সালে রবার্তো কার্লোস ভেনিজুয়েলার বিপক্ষে ফ্রি-কিক থেকে গোল করেছিলেন।
তবে দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতেই সেগোভিয়া একটি দুর্দান্ত শটে স্কোর সমতা ফেরান। জেফারসন সাভারিনোর পাস থেকে তিনি এই গোলটি করেন, যা ব্রাজিলের গোলরক্ষকের নাগালের বাইরে চলে যায়।
ম্যাচের শেষ দিকে ব্রাজিলের পক্ষে জয়ের সুযোগ আসে, তবে ভেনিজুয়েলার গোলরক্ষক রাফায়েল রোমো পেনাল্টি থেকে ভিনিসিয়ুস জুনিয়রের দুর্বল শটটি রুখে দেন। এরপরে রিবাউন্ডেও গোল করতে ব্যর্থ হন ভিনিসিয়াস। শেষ দিকে ভেনিজুয়েলার বদলি খেলোয়াড় আলেকজান্ডার গঞ্জালেস গ্যাব্রিয়েল মার্টিনেলি ও ভিনিসিয়ুকে আঘাত করার কারণে লাল কার্ড দেখে মাঠ ছাড়েন, তবে ১০ জন খেলোয়াড় নিয়েও ভেনিজুয়েলা শেষ পর্যন্ত ব্রাজিলকে আটকে রাখতে সক্ষম হয়।
ম্যাচ শেষে রাফিনিয়া ব্রাজিলিয়ান টিভি গ্লোবোকে জানান, ‘খুব দুঃখজনক কারণ জয়টাই আমার কাছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। আমরা জানতাম, ম্যাচটি সহজ হবে না, ভেনিজুয়েলাও বেশ ভালো দল। তবে সুযোগগুলো কাজে না লাগালে ম্যাচ জটিল হয়ে যায়। আমাদের কাজ চালিয়ে যেতে হবে যেন আবার জয়ের ধারায় ফিরতে পারি।’
এ ড্রয়ের পর ১৭ পয়েন্ট নিয়ে ব্রাজিল পয়েন্ট তালিকার তৃতীয় স্থানে রয়েছে, যেখানে আর্জেন্টিনা ২২ পয়েন্ট নিয়ে শীর্ষে রয়েছে।
এদিকে আসন্ন ২০২৬ বিশ্বকাপ বাছাইপর্বের ম্যাচে শুক্রবার (১৫ নভেম্বর) ভোরে প্যারাগুয়ের কাছে ২-১ গোলে পরাজিত হয়েছে বিশ্বচ্যাম্পিয়ন আর্জেন্টিনা। ম্যাচের শুরুতে লাউতারো মার্টিনেজ গোল করে আর্জেন্টিনাকে এগিয়ে নিলেও প্যারাগুয়ের আন্তোনিও সানাব্রিয়া একটি দুর্দান্ত বাইসাইকেল কিকে সমতা আনেন এবং পরে ওমার আলডেরেটের হেডার আর্জেন্টিনাকে হারিয়ে জয় নিশ্চিত করে।
শুক্রবার (১৫ নভেম্বর) আসুনসিওনে অনুষ্ঠিত ম্যাচে প্যারাগুয়ে শুরু থেকেই আক্রমণাত্মকভাবে খেলতে থাকে। ১৮তম মিনিটে আন্তোনিও সানাব্রিয়া বাইসাইকেল কিকের মাধ্যমে দুর্দান্ত এক গোল করে বিশ্বচ্যাম্পিয়নদের বিরুদ্ধে প্যারাগুয়েকে এগিয়ে দেন। এর আগে গুস্তাভো গোমেজের একটি হেড ক্রসবারে আঘাত করলে আরও গোল খাওয়া থেকে বাঁচে আর্জেন্টিনা।
অবশ্য ম্যাচটিতে আগে গোল আর্জেন্টিনাই করে। ম্যাচ শুরু হওয়ার ১১ মিনিটের মাথায় লাউতারো মার্টিনেজ গোল করে আর্জেন্টিনাকে এগিয়ে দেন। সেই গোলের পর বড় জয়ের স্বপ্ন দেখা আর্জেন্টিনা মাটিতে নামে কিছুক্ষণের মধ্যে গোল খেয়ে। তবে লাউতারোর গোলটি প্রথমে অফসাইড হিসেবে বাতিল হলেও ভিএআর চেকের পর গোলটি বৈধ ঘোষণা করা হয়।
দ্বিতীয়ার্ধের শুরুর দিকে প্যারাগুয়ে আরো একটি গোল করে এগিয়ে যায়। ওমার আলডেরেটের হেডটি আর্জেন্টিনার গোলরক্ষক এমিলিয়ানো মার্তিনেজকে পরাস্ত করে বল জালে জড়ায়। এরপর আর্জেন্টিনার পক্ষে সমতা আনার বেশ কয়েকটি সুযোগ সৃষ্টি হয়, তবে টাটি ক্যাস্টেলানোসের প্রচেষ্টা এবং মেসির শটগুলি গোলের বাইরে চলে যায়।
ম্যাচ শেষে আর্জেন্টিনার খেলোয়াড়রা ফাউলের সিদ্ধান্ত নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেন, বিশেষ করে মেসির বিরুদ্ধে আলডেরেটের ফাউল হলেও তাকে লাল কার্ড না দেখানোর জন্য। কোচ লিওনেল স্কালোনি এই সিদ্ধান্তে ক্ষোভ প্রকাশ করেন।
এই হারের পর আর্জেন্টিনা পয়েন্ট টেবিলের শীর্ষে ওঠার সুযোগ হারায় এবং যদি কলম্বিয়া তাদের পরবর্তী ম্যাচে জেতে, তবে তারাও শীর্ষে উঠে আসতে পারে।