প্রধান নির্বাচন কমিশনারের নেতৃত্বে নতুন নির্বাচন কমিশন এর দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকে দেশের জাতীয় নির্বাচনী ট্রেনের হুইসেল বেজে উঠেছে। সামনে যতই প্রতিবন্ধকতা থাকুক, এই ট্রেন সবকিছু মাড়িয়ে গতিবেগ বাড়িয়ে, স্টেশন ছাড়িয়ে ছুটে চলবেই। বিগত বহুবছর থেকে নির্বাচনী ট্রেনে উঠতে চায়নি দেশের বড় দুই রাজনৈতিক দল-বিএনপি জামাত। একক ভাবে নির্বাচনের সবকিছু নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নেয়ার কারণে নির্বাচনে অংশ নেয় নি রাজনৈতিক বেশিরভাগ দল। তবে ছাত্র-জনতার আন্দোলনে আওয়ামী লীগ সরকার পালিয়ে যাওয়ায় দেশে একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের পরিবেশ তৈরি হচ্ছে বলে মনে করছেন রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ এবং সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা। আর এমন স্বাচ্ছন্দ্যকর পরিবেশ বইতে থাকায় একটু আগেভাগেই নির্বাচনী ট্রেনে ওঠে পড়েছে বিয়ানীবাজারের বিএনপি-জামায়াত।
সিলেট-৬ আসনের অন্তর্গত বিয়ানীবাজার উপজেলায় সম্ভাব্য প্রার্থীরা ব্যাপক গণসংযোগ শুরু করেছেন। স্থানীয় জনগণকে সংগঠিত করে, জনগণের ভাষা বোঝার মধ্য দিয়ে কৌশলী প্রচারণায় অনেকটা প্রতিদ্বন্ধিতায় নেমেছেন বিএনপি-জামায়াতের আগ্রহীরা। যদিও হাসিনা সরকারের পতনের পরই বিয়ানীবাজারে নির্বাচনী তোড়জোড় শুরু হয়। আর এতে প্রতিদ্বন্ধিতার মাত্রা যোগ করেন নির্বাচনের সম্ভাব্য প্রার্থীরা।
তবে এখনো পর্যন্ত দেশের দুই প্রধান রাজনৈতিক দল বিএনপি-জামায়াত ছাড়া অন্য কোন প্রার্থীর প্রচারণা দেখা যায়নি প্রবাসী অধ্যুষিত এই উপজেলায়। বিয়ানীবাজার-গোলাপগঞ্জ নির্বাচনী আসন থেকে প্রতিদ্বন্ধিতা করার জন্য বিএনপি থেকে বিগত দিনে ধানের শীষের প্রার্থী ফয়সল আহমদ চৌধুরী, জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি আবুল কাহের চৌধুরী শামীম ও বর্তমান সাধারণ সম্পাদক এমরান আহমদ চৌধুরী গণসংযোগ চালিয়ে যাচ্ছেন। আর জামায়াতে ইসলামী থেকে ঢাকা মহানগরী (উত্তর) এর সভাপতি ও ছাত্র শিবিরের সাবেক কেন্দ্রীয় সভাপতি মোহাম্মদ সেলিম উদ্দিন নির্বাচনের মাঠে ঘাম ঝরাচ্ছেন।
গত এক সপ্তাহে বিয়ানীবাজার এবং গোলাপগঞ্জ উপজেলার পৃথকস্থানে বিএনপি-জামায়াতের বেশ কয়েকটি অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়েছে। জামায়াতে ইসলামীর উদ্যোগে সকল অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে বিয়ানীবাজারের আগামী দিনের উন্নয়ন পরিকল্পনা তুলে ধরে বক্তব্য রাখেন জামায়াতে ইসলামী থেকে ঢাকা মহানগরী (উত্তর) এর সভাপতি ও ছাত্র শিবিরের সাবেক কেন্দ্রীয় সভাপতি মোহাম্মদ সেলিম উদ্দিন। তিনি এই আসনের উন্নয়ন নিয়ে তাঁর স্বপ্নের কথা জানিয়ে দেন।
এদিকে গোলাপগঞ্জ এক অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন সিলেট জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট এমরান আহমদ চৌধুরী। প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনিও বিগত সরকারের সমলোচনার পাশাপাশি জাতীয় নির্বাচনের প্রতি ইঙ্গিত করে বিয়ানীবাজারে উন্নয়নের নামে লুটপাট করা হয়েছে বলে মন্তব্য করেন। অন্যদিকে বিয়ানীবাজারের একটি অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন কেন্দ্রীয় বিএনপির সদস্য ও জেলার সাবেক সভাপতি আবুল কাহের চৌধুরী শামীম। তিনিও আগামী জাতীয় নির্বাচনকে ঘিরে নিজের বক্তব্য উপস্থাপন করেন।
অপরদিকে অল্প কয়েক দিনের ব্যাবধানে বিগত দিনে ধানের শীষের প্রার্থী ফয়সল আহমদ চৌধুরী বিয়ানীবাজার উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে কর্মী এবং সমর্থকদের নিয়ে আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন। অনেকটা শো-ডাউনের আদলে তিনিও নিজের অবস্থান জানান দেন।
বিয়ানীবাজার-গোলাপগঞ্জে কোন রাজনৈতিক দলের একক আধিপত্য নেই। বিগত দিনের জাতীয় নির্বাচনে এই আসন থেকে স্বতন্ত্র প্রার্থীও বিজয়ী হয়েছেন। সর্বশেষ আমি-ডামির নির্বাচনেও নৌকার প্রার্থীকে তুমুল প্রতিদ্বন্ধিতায় পড়তে হয়।
জানা যায়, শুধুমাত্র জাতীয় নির্বাচন নয়, আসন্ন উপজেলা (যদি বিলুপ্ত না হয়), পৌরসভা, ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনকে ঘিরেও মাঠে কাজ করছেন বিএনপি-জামায়াতের সম্ভাব্য আগ্রহী প্রার্থীরা। উপজেলা, পৌরসভা, ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচনকে সামনে রেখেও দল গোছানোর কাজ করছেন দুই রাজনৈতিক দলের দায়িত্বশীলারা। এক্ষেত্রে একাধিক বিকল্প প্রার্থীকেও কৌশলে ভোটারের সাথে মেশানোর চেষ্টা চলছে।
জাতীয় নির্বাচনে তোড়জোড় নিয়ে জানতে চাইলে সুজন বিয়ানীবাজার শাখার সভাপতি এডভোকেট মো: আমান উদ্দিন বলেন, আসন্ন নির্বাচন সুষ্টু হবে-আশা করছি। মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকার ফিরে আসবে। নিরপেক্ষ নির্বাচনের দাবীতে গণতন্ত্রকামী মানুষের বিপ্লব কাজে লাগানোর চেষ্টা করবে রাজনৈতিক দলগুলো। এক্ষেত্রে বিএনপি-জামায়াত মাঠ গোছানোর কাজটি আগেই সেরে রাখতে চায় বলে মনে হচ্ছে।
কমিউনিষ্ট পার্টির বিয়ানীবাজারের সভাপতি এড. আবুল কাশেম জানান, মানুষ এখন ভোটের প্রহর গুণছে। রাজনৈতিক দলগুলো ভোটের দাবীর পাশাপাশি ঘর গুছিয়ে রাখছে। এটা গণতন্ত্রের সৌন্দর্য্য।
বিএনপির সম্ভাব্য সংসদ প্রার্থী ফয়সল আহমদ চৌধুরী বলেন, আমরা দলকে গুছিয়ে নিয়ে এসে নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছি। যেহেতু আমাদের বিশাল কর্মী বাহিনী সেহেতু তাদেরকে মাঠে চাংগা রাখতে আমি নিজে বিভিন্ন কর্মসূচিতে অংশ নিচ্ছি। বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের লোক দেখানো নির্বাচনে অংশ নিয়ে অল্প ভোটের ব্যবধানে পরাজিত হয়েছি। তাতেই প্রমাণিত হয় সিলেট-৬ আসনের মানুষ আমাকে তাদের জনপ্রতিনিধি হিসেবে দেখতে চায়।
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদের সদস্য ও ঢাকা মহানগর উত্তরের আমির মুহাম্মদ সেলিম উদ্দিন বলেন, মানুষের সমস্যা গুলো শুনতে আমি তাদের কাছে বার বার ছুটে যাচ্ছি যাতে তারা আমাকে তাদের একজন মনে করে তাদের দাবি গুলো বলতে পারে। আমি তৃণমূলের প্রত্যন্ত অঞ্চল ঘুরে সমস্যা গুলো চিহ্নিত করে লিপিবদ্ধ করে রাখছি। আশা করছি মানুষ যদি আমাকে নির্বাচিত করে সংসদে পাঠায় তাহলে আমি তাদের খেদমত করার পাশাপাশি সমস্যাগুলো সমাধান করার চেষ্টা করবো ইনশাআল্লাহ।