• বুধবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৫, ০৪:২৯ পূর্বাহ্ন

বিয়ানীবাজারের কমিউনিটি ক্লিনিকে ২৭ ধরনের ওষুধের কথা থাকলেও মেলে ৩ প্রকার

সামিয়ান হাসান / ৩০৭ Time View
Update : রবিবার, ২৯ সেপ্টেম্বর, ২০২৪

কাগজে-কলমে সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৩টা পর্যন্ত কমিউনিটি ক্লিনিক খোলা থাকার কথা থাকলেও এর বাস্তব চিত্র ভিন্ন। বিয়ানীবাজারে কমিউনিটি ক্লিনিকের কার্যক্রম চলে মাত্র দুই থেকে তিন ঘণ্টা। তাও আবার প্রতিদিন নয়, সপ্তাহে মাত্র ২-৩দিন। এতে সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে উপজেলার গ্রামীণ জনপদের সাধারণ মানুষ। এছাড়া ২৭ প্রকারের ওষুধ সরবরাহের কথা থাকলেও দু’তিন প্রকার ওষুধ পাওয়া যায় এখানে। এতে ক্ষুব্ধ সেবা গ্রহীতারা।
বিয়ানীবাজার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্র জানায়, উপজেলায় ১টি পৌরসভা ও ১০টি ইউনিয়ন রয়েছে। কমিউনিটি ক্লিনিক রয়েছে ২৫টি। এতে কর্মরত সিএইচসিপির সদস্য ২২জন এবং এইচএ রয়েছেন ৩৫জন। এছাড়াও এইচআই আছেন ৩জন আর এএইচআই ৯জন দায়িত্ব পালন করেন। প্রতিটি কমিউনিটি ক্লিনিকে সিএইচসিপিদের সপ্তাহে ৬ দিন দায়িত্ব পালন করার কথা। এর সঙ্গে ইউনিয়নভিত্তিক স্বাস্থ্য সহকারীদের ৩ দিন এবং পরিবার পরিকল্পনা সহকারীদের (এফডব্লিউএ) ৩ দিন কমিউনিটি ক্লিনিকে বসে সেবা দেওয়ার নির্দেশনা রয়েছে। সে হিসাবে প্রতিদিন কমিউনিটি ক্লিনিকে দুজনের সেবা দেওয়ার কথা থাকলেও পাওয়া যায় শুধু সিএইচসিপিদের। এসব ক্লিনিকে তিন মাসের জন্য প্যারাসিটামল, মেট্রোনিডাজল, অ্যান্টাসিড, হিস্টাসিন, খাওয়ার স্যালাইনসহ ২৭ প্রকারের ওষুধ সরবরাহ করা হয়।
বিয়ানীবাজার পৌরশহরের একটি কমিউনিটি ক্লিনিকের পাশের বাসিন্দা বিলকিছ বেগম অভিযোগ করে জানান, ডাক্তার ঠিকমতো ওষুধ দেয় না। নিয়মিত ক্লিনিকে আসে না। বেলা ১১টায় আসলেও দুপুর ১টার আগেই চলে যায়। লাউতা কমিউনিটি ক্লিনিকে আসা হাজেরা বেগম বলেন, ‘নামেই ক্লিনিক। প্রয়োজনের সময় সেবা পাওয়া যায় না। বেশিরভাগ সময়ই থাকে বন্ধ। ২৭ ধরনের ওষুধের কথা বলা হলেও দুই এক প্রকার ওষুধ ছাড়া কিছুই পাওয়া যায় না। প্রতিজনের কাছ থেকে ওষধ দেওয়ার জন্য ৫ থেকে ১০ টাকা নেন। টাকা না দিলে তিনি ওষুধ দেন না।’ রাবেয়া বেগম নামের এক নারী বলেন, ‘মাঝে মধ্যে ওষুধ নিতে আসি। আসলেই বলে ওষুধ নাই, শেষ অই গেছে। তাহলে ওষুধ দেয় কারে?’
জানা যায়, উপজেলায় উত্তরভাগ কমিউনিটি ক্লিনিক, করগ্রাম কমিউনিটি ক্লিনিক, বাগবাড়ী কমিউনিটি ক্লিনিক, শিকারপুর কমিউনিটি ক্লিনিক, পাঞ্জিপুরী কমিউনিটি ক্লিনিক, গয়লাপুর কমিউনিটি ক্লিনিক, ঢেউনগর কমিউনিটি ক্লিনিক, শেওলা ইউঃ স্বাঃ পঃ কঃ কেন্দ্র, গোবিন্দশ্রী কমিউনিটি ক্লিনিক, আকাখাজনা কমিউনিটি ক্লিনিক, খশিরবন্দ কমিউনিটি ক্লিনিক, কসবা কমিউনিটি ক্লিনিক, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, মাথিউরা কমিউনিটি ক্লিনিক, তিলপাড়া ইউঃ উপস্বাস্থ্য কেন্দ্র, সানেশ্বর কমিউনিটি ক্লিনিক, পাতন কমিউনিটি ক্লিনিক, ঘুঙ্গাদিয়া কমিউনিটি ক্লিনিক, ছোটদেশ কমিউনিটি ক্লিনিক, লাউতা ইউঃ স্বাঃ ও পঃ কঃ কেন্দ্র, মাথিউরা ১নং ওয়ার্ড কমিউিনিটি ক্লিনিক ও কোনাগ্রাম কমিউনিটি ক্লিনিক রয়েছে। গ্রামীণ সাধারণ মানুষের স্বাস্থ্যসেবায় ক্লিনিকগুলো কাজ করছে বলে সংশ্লিষ্টদের দাবী। এসব কমিউনিটি ক্লিনিকে কর্মরতদের দাবী, ওষুধ প্রাপ্তি সাপেক্ষে তারা তা বিতরণের চেষ্টা করেন। নিয়মিত অফিসও করেন তারা। তবে বিভিন্ন কমিউনিটি ক্লিনিকের প্রতিবেশীদের অভিযোগ, একদম গ্রামীণ-নির্জন এলাকায় অবস্থিত ক্লিনিকগুলোতে অনিয়ম হয় বেশী। যেখানে সপ্তাহের বেশীরভাগ সময় বন্ধ থাকে ক্লিনিকগুলো।
উপজেলার কুড়ার বাজার ইউনিয়নের খশিরবন্দ কমিউনিটি ক্লিনিকের সিএইচসিপি গোপাল চন্দ্র দাস বলেন, প্রতিদিন গড়ে ৪০-৫০ জন রোগী চিকিৎসা নেন। এরমধ্যে সাধারণত সর্দি, কাশি, জ্বর, আমাশয়, পাতলা পায়খানা, এলাার্জি এবং প্রসূতিদের চেকআপ ও আয়রণ ওষুধ দিই। আমরা রোগীদের প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে থাকি। ক্লিনিকে ২৭ প্রকার ওষুধ দেওয়া হয়। আমি সকাল ৯টা থেকে ৩টা পর্যন্ত ক্লিনিকে থাকি। তবে অনেক সময় ওষুধ শেষ হওয়ার কারণে সব প্রকারের ওষুধ দেয়া সম্ভব হয়না।
বিয়ানীবাজার উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা: মনিরুল হক খান বলেন, সেবা গ্রহীতাদের যেসব অভিযোগ রয়েছে, সেগুলো আমরা তদারকি করবো। এছাড়া প্রতি মাসে আমরা ক্লিনিকগুলো পরিদর্শন করছি। গ্রামীণ জনপদে স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছে দিতে আমরা বিভিন্ন উদ্যোগ নিয়েছি।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category