**ঢাকা, ৯ জুলাই ২০২৫** – প্রায় নয় মাস মানব পাচারের নৃশংস ঘটনার শিকার হয়ে লিবিয়া থেকে মুক্তি পেয়ে আজ Hazrat Shahjalal আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করেছেন ঝিনাইদহের মতিউর রহমান সাগর ও কুষ্টিয়ার তানজির শেখ। বিমানের ফ্লাইট নম্বর ছিল ইউজেড ২২২, যা পরিচালনা করেছিল বুরাক এয়ারলাইন্স। মুখ্যমন্ত্রী ও পরিবার সদস্যদের সাথে সন্ত্রস্ত দুই তরুণের আপাত তাত্ত্বিক নিরাপত্তা
সাগর ও তানজির একত্রে ফ্লাইটে উঠে সকাল ৭:৩০ টার দিকে দেশে পৌঁছেছে । ফ্লাইটে মোট ১৬২ জন বাংলাদেশি থাকলেও, তাদের প্রত্যাবর্তন মানবাধিকার, আইন শৃঙ্খলা ও কূটনৈতিক প্রচেষ্টার সাফল্য নির্দেশ করে।
২০২৩ সালে পারিবারিক সচ্ছলতা অর্জনের স্বপ্নে তারা লিবিয়া গিয়েছিলেন চাকরির আশ্বাসে। প্রতিটি পরিবার Tk ৪00,000 প্রদান করেছিল, যা পরে দেখা যায় ছিল বাপে’র দাম । মানব পাচারকারীরা তাদের প্রথমে মোঃ পারভেজ ও স্থানীয় প্রতারক নেটওয়ার্কে আটকায় এবং পরে রহস্য নেটওয়ার্ক বা ‘মাফিয়া’ চক্রে বিক্রি করে দেয়।
সাগর ও তানজিরকে একটি অন্ধকার ঘরে আটকে রাখা হয় যেখানে তাদের প্রতি দিন তীব্র নির্যাতন চালানো হয়। লোহার রড ও লাঠি দিয়ে আঘাত, বৈদ্যুতিক শক, এবং বর্ণবৈষম্যপূর্ণ শত শত ফলত দেহ ও মনে গভীর ক্ষত সৃষ্টি হয় । তারা ৮০ জন অন্য বাংলাদেশি সহ প্রতিনিয়ত মানবতাবিরোধী নির্যাতনের শিকার হন।
নির্ভেজাল নির্যাতনের চরম পর্যায়ে নিয়ে আসার পর তাদের অভিভাবকরা মৃত্যুঞ্জয়রে ভাসায়। শেষে তাকে একটি আত্মীয়ের ঘরে আশ্রয় দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। এটি তাদের বেঁচে থাকার অন্যতম বড় হাতিয়ার। তারপর শুরু হয় দীর্ঘ ও জটিল কূটনৈতিক ও আইনি প্রক্রিয়া। মার্কিন রাষ্ট্রদপ্তরের মানবপাচার বিরোধী দপ্তর ও International Justice Mission গঠন করে জরুরী পদক্ষেপ শুরু করে। IOM (International Organization for Migration) এছাড়া আর্থিক ও নিরাপত্তা সহায়তা দেয়্ ।
সাগর ও তানজিরের মুক্তিতে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, মুদি কল্যাণ ও প্রবাসী মন্ত্রীদপ্তর, ঢাকা ও ত্রিপোলি মহাকূটনৈতিক প্রতিনিধি, এবং IOM এর সমন্বিত প্রচেষ্টা ছিল মূল চালিকা শক্তি । বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূতদের ত্রিপোলি-ঢাকা-ডাখাসহল আন্দোলন ও স্থানীয় প্রশাসনের সহযোগিতাগুলো উদ্ধার প্রক্রিয়াকে ত্বরান্বিত করেছে।
BRAC, কুড়িগ্রাম-ভিত্তিক মানবিক উন্নয়ন সংস্থা, এই প্রত্যাবর্তনকে মানবাধিকার ও আন্তঃরাষ্ট্রীয় সহযোগিতার নিদর্শন হিসেবে বিবেচনা করেছে। ঘোষণা দিয়ে বলা হয়েছে, এটি “উভয়পক্ষের কঠোর কাজ, মানবিক নেতৃত্ব ও আন্তর্জাতিক সমন্বয়ের উদাহরণ” ।
২০১২–২০২৪ সালের মধ্যে প্রায় ৭৮৪০ জন বাংলাদেশী মানব পাচারের ফাঁদে পড়েছে, যার অধিকাংশই কাজের আশ্বাসে বিদেশ যাত্রা করে নিষ্ঠুর বাস্তবতায় পতিত হয়েছে । বৈধ ভিসা না থাকলেও তারা পর্যায়ক্রমে সৌদি, সংযুক্ত আরব আমিরাত ও তিউনিসিয়ার মাধ্যমে লিবিয়ায় পৌঁছে।
২০১৫ সালের গণহত্যায় ২৬ জন বাংলাদেশি থাকে মানব পাচারের শিকার হয়ে নিহত হয় যা এই সঙ্কটের ভয়াবহতা প্রতিউত্তর করে।
আজকের প্রত্যাবর্তনের পর IOM প্রত্যেককে BDT 6,000 নগদ, জরুরি খাদ্য, প্রাথমিক চিকিৎসা ও সাময়িক আবাসনের ব্যবস্থা করেছে । তবে মানসিক ও আর্থিক পুনর্বাসনে সরকার, স্থানীয় এনজিও ও পরিবারগুলির যুগ্ম দায়িত্ব রয়েছে।
বোর্ডার নিরাপত্তা, ভিসা দুর্নীতি প্রতিরোধ এবং জনগণের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধির আহ্বান করা হচ্ছে । পররাষ্ট্রমন্ত্রণালয় ও মন্ত্রীদপ্তর পুনরায় জানাচ্ছে অবৈধভাবে বিদেশ যাত্রার ক্ষতিকর ফলাফল এবং ঝুঁকির বিষয়ে শিক্ষা।
লিবিয়ায় শ্রম আইন ব্যবস্থা ও নিরাপত্তা অব্যবস্থা মানব পাচারকে শক্তিশালী করেছে। বাংলাদেশ–লিবিয়া পররাষ্ট্র সম্পর্কের মধ্যে যথেষ্ট সংকটপূর্ণ এই পরিস্থিতি, যেখানে প্রায় ৩% বাংলাদেশি অভিবাসী এখনও আশঙ্কাজনক অবস্থায় রয়েছে । গণহত্যা ও বর্তমান নির্যাতনের ঘটনার ফাঁদ সময়োচিত উদ্যোগের প্রয়োজনীয়তা প্রकट করে দিয়ে।
ঝিনাইদহের মতিউর রহমান সাগর ও কুষ্টিয়ার তানজির শেখের দেশের জন্য প্রত্যাবর্তন একটি মানবিক জয়, তবে এটি একই সঙ্গে খানিক ভীতিপ্রদূতকারী। এটি স্মরণ করিয়ে দেয়, মানব পাচার শুধু ব্যক্তিগত না—এটি একটি জাতীয়-আন্তর্জাতিক তদন্ত ও সমাধানের বিষয়। ভবিষ্যতে এ ধরণের সংঘটিত ঘটনা প্রতিরোধে পারস্পরিক সহযোগিতা, জনসচেতনতা ও সঠিক নীতিমালার বিকাশ অতীব জরুরি।