• বুধবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৫, ০৪:৩৬ পূর্বাহ্ন

লাইটিং পদ্ধতিতে ড্রাগন চাষ করে স্বাবলম্বী আবুল কালাম

ডেস্ক রিপোর্ট / ১৪৮ Time View
Update : মঙ্গলবার, ১০ ডিসেম্বর, ২০২৪

আবুল কালাম আজাদ পেশায় একজন তড়িৎ প্রকৌশলী। দেশের একটি বৃহৎ করপোরেট প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন। বছর চারেক আগে গ্রামের বাড়িতে নিজের ২০ বিঘা জমিতে গড়ে তোলেন ড্রাগন ফলের বাগান। পরবর্তীকালে ২৬ বিঘা জমিজুড়ে আরও দুটি ড্রাগন বাগান গড়ে তোলেন। শুরুতে শুধু মৌসুমের সময় তার বাগানে ফল আসত। তবে রাতের বেলা বৈদ্যুতিক বাতি জ্বালিয়ে দিনের দৈর্ঘ্য বাড়িয়ে এখন সারাবছর তার বাগানে ড্রাগনের ফলন হচ্ছে। লাইটিং পদ্ধতি ব্যবহার করে অসময়ে ড্রাগন ফলিয়ে চার-পাঁচগুণ বেশি দামে বিক্রি করছেন ড্রাগন। কৃত্রিম আলো ব্যবহার করে দিনের দৈর্ঘ্য বাড়িয়ে আজাদের অসময়ে ড্রাগন চাষের এ পদ্ধতি ব্যাপকভাবে সাড়া ফেলেছে।

নওগাঁয় প্রথমবারের মতো লাইটিং পদ্ধতিতে ড্রাগন চাষ করে এলাকায় চমক সৃষ্টি করা তড়িৎ প্রকৌশলী আবুল কালামের আজাদের বাড়ি নওগাঁর সাপাহার উপজেলার হাঁপানিয়া গ্রামে।

আজাদের ড্রাগন বাগান তিনটি সাপাহারের হাঁপানিয়া ও দীঘিরহাট এলাকায়। তিনটি বাগানেই রাতের বেলায় হাজার হাজার বৈদ্যুতিক বাতি জ্বালিয়ে চাষ হচ্ছে ড্রাগন ফল। সারাবছর ৩০০ মেট্রিক টনের বেশি ড্রাগন ফল হয়। যার বাজার মূল্য প্রায় ৭ কোটি টাকা।

সম্প্রতি সরেজমিনে গেলে উদ্যোক্তা আবুল কালাম আজাদ জানান, ‘করোনা মহামারীর সময় দিনের পর দিন অফিস যেতে হতো না। বাড়িতে বসেই কোনো রকমে অফিসের কাজ করতেন। ওই সময় ভাবেন পৈতৃকভাবে পাওয়া কৃষি জমিগুলোকে কীভাবে আরও বেশি উৎপাদন খাতে ব্যবহার করা যায়। সেই থেকে টেলিভিশন ও ইউটিউবে কৃষিবিষয়ক বিভিন্ন কনটেন্ট দেখতে থাকেন। সেই ভাবনা থেকে ২০২০ সালে বাড়ির পাশে পৈতৃক সূত্রে পাওয়া জমিতে প্রথমে পরীক্ষামূলকভাবে ড্রাগন চাষ শুরু করে। সেখানে ভালো সাফল্য পাওয়ায় পরের বছর ওই বাগানের পরিধি বাড়তে থাকে।

লাইটিং পদ্ধতিতে শীতকালে ড্রাগনের ফলানোর বিষয়ে তিনি বলেন, ‘ড্রাগন গাছকে বলা হয় রোদের গাছ। এই গাছ যত বেশি সূর্যের আলো পাবে, তত বেশি ফুল ও ফল দেবে। বাংলাদেশে সবচেয়ে বড় দিন জুন মাসে। এ জন্য এ সময় ড্রাগন গাছে সবচেয়ে বেশি ফুল ও ফল আসে। আমাদের দেশে সাধারণত ছয় মাস (মে থেকে অক্টোবর) ড্রাগনের ফলন হয়ে থাকে। দীনের দৈর্ঘ্য কম থাকায় বাকি ছয় মাস ড্রাগন ফল ধরে না। এ সময়টাতে বিশেষ ধরনের বৈদ্যুতিক বাতি জ্বালিয়ে বাগানে দিনের পরিবেশ তৈরি করে ড্রাগন গাছে ফুল ও ফল ধরানো সম্ভব।’

১০ হাজার লাইট কিনতে খরচ পড়েছে ৬০ লাখ টাকা। এ ছাড়া বাতিগুলো জ্বালানোর জন্য তার ও বাঁশের খুঁটি ব্যবহার করতে আরও ১০-১৫ লাখ টাকা খরচ হয়েছে। এ সাফল্য দেখে অন্যরাও মোডিফাই করা বিশেষ ধরনের এ এলইডি লাইট ব্যবহার করছেন।

আবুল কালাম আজাদ জানান, লাইটিং পদ্ধতি ব্যবহার করে মৌসুমের চেয়ে বেশি ফলন পাচ্ছেন অসময়ে। ৪৬ বিঘার বাগানে মৌসুমে ১৫০ মেট্রিক টন ড্রাগন উৎপাদন হয়। লাইটিং পদ্ধতিতে শীতকালে ওই পরিমাণ বাগানে ড্রাগনের ফলন হচ্ছে ১৬০ মেট্রিক টনের বেশি। মৌসুমের সময় প্রতি কেজি ড্রাগন ১৫০ থেকে ২০০ টাকায় বিক্রি হয়। অসময়ে ড্রাগন ফলিয়ে সেই ড্রাগন বিক্রি হয় ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা কেজি দরে। অর্থাৎ অসময়ে ড্রাগন ফলিয়ে পাঁচগুণ বেশি দাম পাওয়া যায়।

ড্রাগন বাগানের ব্যবস্থাপক মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘আমরা এ বাগানে স্থায়ীভাবে ১৫ জন মানুষ কাজ করি। এখানে ২০ হাজার থেকে ১০ হাজার টাকা মাসিক চুক্তিতে স্থায়ী শ্রমিকরা কাজ করেন। এ ছাড়া প্রতিদিন দৈনিক মজুরি চুক্তিতে আরও প্রায় ৬০-৭০ জন কৃষি শ্রমিক কাজ করেন বাগানে। এ বাগানটা হওয়ার পর থেকে গ্রামের প্রায় ১০০ মানুষের কর্মসংস্থান হয়েছে।’

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক আবুল কালাম আজাদ বলেন, উৎপাদনের তাগিদেই এ ধরনের কৃষি উদ্যোক্তারা নতুন নতুন কলাকৌশল প্রয়োগ করে খুঁজে নেয় নতুন কিছু। সাপাহারের হাঁপানিয়ার মতো প্রত্যন্ত এলাকায় আজাদ আধুনিক কৃষিকৌশল ব্যবহার অসময়ে ড্রাগন ফলিয়ে দৃষ্টান্ত সৃষ্টি করেছেন। এতে অন্য কৃষকরাও অনুপ্রাণিত হচ্ছেন।

নওগাঁ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্র জানায়, সমপ্রতি নওগাঁয় ড্রাগনের চাষ বেড়েছে। এ বছর জেলায় ৭০ হেক্টর জমিতে চাষ হচ্ছে। মাত্র তিন বছরের ব্যবধানে এ জেলায় ড্রাগনের চাষ বেড়েছে প্রায় তিনগুণ। লাইটিং পদ্ধতিতে ড্রাগন চাষ হচ্ছে জেলার চারটি বাগানে। সাপাহারে আজাদের তিনটি বাগান ছাড়াও জেলার রানীনগর উপজেলার খানপুকুর এলাকায় ৪০ বিঘার একটি বাগানে লাইটিং পদ্ধতিতে ড্রাগন চাষ করা হচ্ছে।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category