• শনিবার, ১০ মে ২০২৫, ১১:২৭ অপরাহ্ন

সাবেক রাষ্ট্রপতি আব্দুল হামিদ দেশ ছাড়ার নেপথ্যে কারা

ডেস্ক রিপোর্ট / ৩ Time View
Update : শনিবার, ১০ মে, ২০২৫

সাবেক রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের দেশ ছাড়া নিয়ে চলছে তোলপাড়। ঘটনাটি জানাজানির পর বিক্ষোভে ফেটে পড়ে ছাত্র-জনতা। সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত উপদেষ্টার পদত্যাগ দাবি করে মিছিলও হয়েছে। কীভাবে তিনি দেশ ছাড়লেন তা নিয়ে চলছে আলোচনা-সমালোচনা।

সরকারের নীতিনির্ধারকরা জানাচ্ছেন, আবদুল হামিদ দেশ ছেড়ে চলে যাবেন সেই তথ্য ছিল না। অথচ তিনি ভিআইপি প্রটোকল নিয়েছেন শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে। এমনকি সাবেক রাষ্ট্রপতি গাড়িতে বসেই ইমিগ্রেশন শেষ করেছেন। তার দেশত্যাগের বিষয়টি বিমানবন্দরের প্রভাবশালী তিন গোয়েন্দা সংস্থার সমম্বয়ে জানাজানি করা হয়েছিল বলে একটি সাধারণ ডায়েরিতে বলা হয়েছে। অভিযোগ উঠেছে, আবদুল হামিদের দেশত্যাগের ঘটনায় পুলিশের চার কর্তাকে বলির পাঠা বানানো হয়েছে।

শাহজালাল বিমানবন্দরে কর্মরত একটি গোয়েন্দা সংস্থার নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তা বলেন, সম্পূর্ণ নিয়ম মেনেই সাবেক রাষ্ট্রপতি থাইল্যান্ড গেছেন। তিনি আসার আগেই তার প্রটোকল অফিসাররা বিমানবন্দরে আসেন। বিষয়টি ঊর্ধ্বতনদের অবহিত করা হয়। বিমানবন্দরের প্রধান নির্বাহীও বিষয়টি কর্তৃপক্ষকে অবহিত করেছেন। আবদুল হামিদ বিমানবন্দরে উত্তর দিক সংলগ্ন ভিআইপি গেইটের সামনে আসেন। ইমিগ্রেশন শেষ করার আগ পর্যন্ত তিনি গাড়িতেই বসা ছিলেন। প্রায় ঘণ্টাখানেকের ব্যবধানে তার সামগ্রিক কাজ শেষ হয়।

তিনি আরও বলেন, উড়োজাহাজ ছাড়ার আগ পর্যন্ত বিমানবন্দরে কর্মরত ঊর্ধ্বতনরা তার সঙ্গে ছিলেন। দফায় দফায় তার বিষয়ে ঊর্ধ্বতনদের অবহিত করা হয়। একটি সংস্থার তরফে জিডি করা হয়েছে। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে লিখিতভাবে জানানোকে জিডি বলা হয়। অথচ পুলিশের চার কর্মকর্তাকে বলির পাঠা বানানো হয়েছে।

পুলিশ সূত্র জানায়, আবদুল হামিদের দেশত্যাগের আগে ও পরে কী হয়েছে সেই বিষয়ে লিখিতভাবে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছে একটি গোয়েন্দা সংস্থা। নোটে বলা হয়েছে, ‘টিজি৩৪০ বিমানযোগে চিকিৎসার উদ্দেশ্যে ব্যাংককগামী যাত্রী মো. আবদুল হামিদ (ফরমার প্রেসিডেন্ট) ভিআইপি টার্মিনালে এলে টার্মিনাল ইনচার্জ ওসি ইমিগ্রেশন আলফা-১১ স্যারকে অবগত করেন। আলফা-১১ স্যার দুটি গোয়েন্দা সংস্থাকে অবগত করেন। একটি গোয়েন্দা সংস্থার এক সহকারী পরিচালক ও আরেকটির জিএসও-১ অনাপত্তি প্রদান করেন। দুটি গোয়েন্দা সংস্থা থেকে প্রাপ্ত অনাপত্তি ওসি ইমিগ্রেশন আলফা-১১ স্যার এসএস ইমিগ্রেশন (অপারেশন), অ্যাডিশনাল ডিআইজি ইমিগ্রেশন ও ডিআইজি ইমিগ্রেশন স্যারকে অবগত করেন। অ্যাডিশনাল ডিআইজি ইমিগ্রেশন স্যার এসবি চিফ স্যারের রেফারেন্সে ওসি ইমিগ্রেশন আলফা-১১ স্যারকে ইমিগ্রেশন সম্পন্ন করার নির্দেশ প্রদান করেন। ওসি ইমিগ্রেশন আলফা-১১ স্যার এসবির ওপরে উল্লিখিত সিনিয়র স্যারদের নির্দেশে ও দুটি গোয়েন্দা সংস্থা থেকে প্রাপ্ত অনাপত্তি সাপেক্ষে এবং ইমিগ্রেশন ফরট্র্যাক সিস্টেমে কোনো বিরূপ মন্তব্য না থাকায় ভিআইপি টার্মিনালে কর্তব্যরত ইনচার্জকে ইমিগ্রেশন করার নির্দেশ প্রদান করেন। টার্মিনাল ইনচার্জ ইমিগ্রেশন সম্পন্ন করেন। উল্লেখ্য, উক্ত যাত্রীর সঙ্গে তার পুত্র রিয়াদ আহমেদ ও তার শ্যালক ডা. এএনএম নওশাদ খান গমন করেন।’

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, চুপিসারে নয়, বিমানবন্দরে সব গোয়েন্দা সংস্থার দায়িত্বরত কর্মকর্তাদের উপস্থিতি এবং ইমিগ্রেশনের সব আনুষ্ঠানিকতা শেষ করেই দেশ ছাড়েন সাবেক রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ। ঢাকা ত্যাগের সময় সাবেক এ রাষ্ট্রপতি ভিআইপি টার্মিনাল ব্যবহার করেন এবং সার্বিক আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করতে তিনি প্রায় ৪ ঘণ্টা অবস্থান করেন বিমানবন্দরে। সাবেক এই রাষ্ট্রপতি বিমানবন্দরের ভিআইপি টার্মিনালে পৌঁছার পর থেকে দেশত্যাগ পর্যন্ত কোন কর্মকর্তা কী করেছেন, কে কার সঙ্গে যোগাযোগ করে ইমিগ্রেশন সম্পন্নের নির্দেশ দিয়েছেন এ বিষয়ে একটি গোয়েন্দা সংস্থা প্রতিবেদন তৈরি করেছে। গোপনীয় প্রতিবেদনটি সরকারের উচ্চপর্যায়ে পাঠানো হয়েছে।

তারা জানান, ২০২৩ সালের ২৩ এপ্রিল পর্যন্ত আবদুল হামিদ রাষ্ট্রপতি ছিলেন। পদাধিকারবলে তিনি কূটনৈতিক পাসপোর্ট (লাল পাসপোর্ট) ব্যবহার করতেন। পরে রাষ্ট্রপতি পদ থেকে অবসর নেওয়ার পর তিনি কূটনৈতিক পাসপোর্ট সমর্পণ করে সাধারণ পাসপোর্ট নেন। সাধারণ পাসপোর্ট ব্যবহার করেই তিনি ইমিগ্রেশন পার হন। কোনো সংস্থার কাছে আবদুল হামিদের দেশত্যাগের নিষেধাজ্ঞার বিষয়ে কোনো নির্দেশনা ছিল না। গত ১৪ জুলাই কিশোরগঞ্জ সদর থানায় জুলাই অভ্যুত্থানে হামলা ও গুলি করার ঘটনায় সাবেক রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ এবং ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, তার বোন শেখ রেহানা, ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়, মেয়ে সায়মা ওয়াজেদ পুতুলসহ ১২৪ জনের বিরুদ্ধে মামলা হয়।

পুলিশ সদর দপ্তরে কর্মরত ডিআইজি পদমর্যাদার এক কর্মকর্তা বলেন, সাবেক রাষ্ট্রপতির দেশত্যাগের বিষয়টি যারা জানার তারা সবাই আগ থেকেই জানতেন। চার পুলিশ কর্মকর্তাকে বিনা কারণে শাস্তি দেওয়া হয়েছে। এ ঘটনায় দায়িত্বে অবহেলার অভিযোগে ইমিগ্রেশন পুলিশের একজন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার তাহসিনা আরিফকে প্রত্যাহার করা হয়েছে। এ ছাড়া আবদুল হামিদের বিরুদ্ধে কিশোরগঞ্জ সদর থানায় মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই আজহারুল ইসলাম এবং এসবি কর্মকর্তা মো. সোলায়মানকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। তাছাড়া কিশোরগঞ্জের পুলিশ সুপারকেও প্রত্যাহার করা হয়েছে। এতে পুলিশের মনোবলে প্রভাব পড়বে।

তিনি আরও বলেন, আবদুল হামিদ বুধবার রাত ১১টায় বিমানবন্দরে আসেন। তার আসার বিষয়টি ঊর্ধ্বতনদের জানানো হয়। লুকোচুরির বিষয় ছিল না। পুলিশ সদর দপ্তর তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। আশা করি, কমিটি প্রকৃত রহস্য উদঘাটন করে প্রতিবেদন দেবে।

এ বিষয়ে তদন্ত কমিটির প্রধান অতিরিক্ত আইজিপি (প্রশাসন) মতিউর রহমান শেখ জানান, সাবেক রাষ্ট্রপতি (আবদুল হামিদ) কীভাবে পাসপোর্ট পেয়েছেন তা খতিয়ে দেখা হবে। কারা তাকে দেশত্যাগে সহায়তা করেছেন তা উদঘাটনসহ সার্বিক বিষয় নিয়ে কাজ চলছে। এই মুহূর্তে আর কিছু বলা সম্ভব হচ্ছে না।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category