• বৃহস্পতিবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৫, ০৩:০৮ পূর্বাহ্ন

হায়াতুল আলম কাগজে প্রধান শিক্ষক, বাস্তবে ঠিকাদার!

নীলফামারী প্রতিনিধি / ১৬৪ Time View
Update : শুক্রবার, ১১ অক্টোবর, ২০২৪

নীলফামারী জেলার ডোমার উপজেলার আঠিয়াবাড়ি উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক হায়াতুল আলম এর বিরুদ্ধে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে। শুধু তাই নয় একই বিদ্যালয়ে চাকরির পাশাপাশি করছেন ঠিকাদারি। বিদ্যালয়ের ক্লাস চলাকালীন সময়ে ঠিকাদারি কাজে ব্যস্ত থাকেন তিনি এমন অভিযোগ করছেন এলাকাবাসী। এলাকাবাসী বলছেন তিনি কাগজে প্রধান শিক্ষক হলেও বাস্তবে ঠিকাদার। এ ছাড়াও বিদ্যালয়ের বাউন্ডারি ওয়াল ও মাঠ সংস্কারের টাকা আত্মসাৎ সহ বেশ কয়েকটি অভিযোগ উঠেছে তার বিরুদ্ধে। প্রধান শিক্ষকের এমন দ্বায়িত্ব অবহেলায় পড়ালেখার আগ্রহ হারাতে বসেছে শিক্ষার্থীরা। প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়ে বিদ্যালয়টির শিক্ষার পরিবেশ দ্রুত ফিরিয়ে আনার দাবি জানিয়েছেন অভিভাবকরা।
সরজমিনে গিয়ে জানা যায়, ডোমার উপজেলার হরিণচড়া ইউনিয়নের আটিয়াবাড়ী গ্রামের চারপাশে ১০ থেকে ১২ কিলোমিটারের মধ্যে কোনো মাধ্যমিক বিদ্যালয় না থাকায় তৎকালীন ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলাম ও অধ্যাপক নুরুল ইসলাম এবং স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গের সহযোগিতায় ১৯৯২ সালে আটিয়াবাড়ী উচ্চ বিদ্যালয়টি স্থাপন করা হয়। বিদ্যালয়টি ২০০০ সালে মাধ্যমিক স্কুল হিসেবে এমপিও ভুক্ত হয়। বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীর সংখ্যা বর্তমানে ৭৫৬ জন। ১৯৯৫ সালের ১৯ অক্টোবর ওই বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক হিসেবে যোগদান করেন হায়াতুল আলম।
নীতিমালা অনুযায়ী এমপিওভুক্ত কোনো শিক্ষক-কর্মচারী একইসঙ্গে একাধিক কোনো পদে/চাকরিতে বা আর্থিক লাভজনক কোনো পদে সম্পৃক্ত থাকার নিয়ম নেই। তবে এই নিয়মকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়েছেন হায়াতুল আলম। সুকৌশলে উচ্চ মাধ্যমিক পড়ুয়া ছেলের নামে ‘মেসার্স ফাহিম এন্ড হুমা ট্রেডার্স’ নামের একটি সরকার নিবন্ধিত ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করেন তিনি। বিদ্যালয়ের ক্লাস চলাকালীন ঠিকাদারি কাজেই বেশিরভাগ সময় ব্যস্ত থাকতে দেখা যায় তাকে। বর্তমানে ডোমার সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় ও চিলাহাটিতে একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ভবন নির্মাণের কয়েক কোটি টাকার কাজ করছেন তিনি!
স্থানীয় বাসিন্দা ও অভিভাবকদের অভিযোগ, ব্যবসায়িক কাজে ব্যস্ততার কারণে বিদ্যালয়ে সময় দিতে পারেন না প্রধান শিক্ষক হায়াতুল আলম। প্রধান শিক্ষকের এমন দ্বায়িত্ব অবহেলায় পড়ালেখার আগ্রহ হারাতে বসেছে ছাত্র-ছাত্রীরা। তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়ে বিদ্যালয়টির শিক্ষার পরিবেশ দ্রুত ফিরিয়ে আনার দাবি জানিয়েছেন অভিভাবকরা।
এদিকে গেল বছর বিদ্যালয়ের প্রতিবন্ধী ও অসচ্ছল শিক্ষার্থীদের জন্য অনুদানসহ বিভিন্ন খাতে এককালীন বরাদ্দ হয়েছিল প্রায় ৪-৫ লাখ টাকা এতে নিয়ম অনুযায়ী প্রতিজন শিক্ষার্থী পাবে ৫ হাজার করে। তবে কোনো শিক্ষার্থীকে ২ হাজার ৫০০ টাকা আবার কোনো শিক্ষার্থীকে টাকা না দিয়েই প্রধান শিক্ষক ও বিদ্যালয়টির পরিচালনা কমিটির সাবেক সভাপতি ফিরোজ আল মামুন মোটা অঙ্কের অর্থ আত্মসাৎ করেন। বিদ্যালয়ের টিউশন ফি প্রতিবছর গড়ে ২ লাখ টাকা করে বরাদ্দ পায়। নিয়ম হলো এই টাকার একটি অংশ শিক্ষক, কর্মচারীরা স্কেল অনুযায়ী পাবেন। বাকিটা স্কুল উন্নয়ন কাজে ব্যবহার হবে। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে বিদ্যালয়ের বাউন্ডারি ওয়াল নির্মাণ ও মাঠ সংস্কারে ৫ লাখ টাকা বরাদ্দ পায়। তবে নামমাত্র কাজ করে পুরো টাকা আত্মসাৎ করেন প্রধান শিক্ষক হায়াতুল আলম ও সভাপতি ফিরোজ । ২০২৩ সালে বিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষক, পরিচ্ছন্ন কর্মী, অফিস সহায়ক ও পিয়ন পদে নিয়োগ হয়। প্রতিটি পদের জন্য ১০ থেকে ১২ লাখ টাকা পর্যন্ত ঘুষ নেওয়ার অভিযোগ রয়েছে সভাপতি ও প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে। এ ছাড়াও ল্যাব অ্যাসিস্ট্যান্ট, অফিস সহকারী পদে দুই থেকে তিনজনের আগাম টাকা নিয়ে রেখেছেন প্রধান শিক্ষক ও সভাপতি। স্থানীয় বাসিন্দা আব্দুল মজিদ স্বাধীন বাংলা নিউজ-২৪ কে বলেন, ‘স্কুলের মাঠে মাটি ফেলার কথা ছিল ১০০ ট্রলি অথচ ৮ ট্রলি মাটি ফেলে হেডমাস্টার ও সভাপতি পুরো টাকা মেরে দিয়েছেন। কিছু নিয়োগ হইছিল সেখানে প্রায় ৭০ লাখ টাকার লেনদেন হয়েছে। কোনো পরীক্ষা ছাড়াই এসব নিয়োগ হয়েছে। বরাদ্দ এলে বিদ্যালয়ের বাউন্ডারি ওয়ালের কাজও করা হয় নাই। প্রধান শিক্ষক ঠিকমতো স্কুলে থাকেন না। উনি ঠিকাদারি কাজে ব্যস্ত থাকেন বেশি সময়। এভাবে স্কুলের লেখাপড়ার মান নষ্ট হচ্ছে। রেজিস্ট্রেশনের সময় অন্য স্কুলের তুলনায় ২০০ থেকে ৩০০ টাকা বেশি নেওয়া হয়। আমরা চাই আমাদের এলাকার স্কুলে লেখাপড়ার মান যেন ভালো হয় এবং শিক্ষকরা যেন সময়মতো স্কুলে আসেন। এতোদিন যা দুর্নীতি হয়েছে এগুলার প্রতিকার চাই। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক অভিভাবক স্বাধীন বাংলা নিউজ-২৪ বলেন, ‘কিছুদিন আগে মাঠে আট ট্রলি মাটি ফেলেছিল। তারপর সভাপতি বলেছিলেন, “এখানে ৯০ ট্রলি মাটি ফেলা হইছে”। পরে প্রতিবাদ করার পরও কোনো কাজ হয় নাই। তারা আওয়ামী লীগের লোক, তারা যা বলছে সেটাই সঠিক। বাউন্ডারি ওয়াল দেওয়ার কথা ছিল অল্প একটু দিছে তারপর নাকি টাকা শেষ হয়ে গেল। এদিকে আবার স্কুলের ঘরও চলে না। সরকারি যত বাজেট আসে সব প্রধান শিক্ষক আর সভাপতির পকেটে ঢুকে। এদিকে হেডমাস্টার আবার ঠিকাদারি করে বেড়াচ্ছে! তাহলে স্কুলে সময় কখন দেয়। ঠিকাদারি করবে না স্কুলে সময় দিবে।‘
স্থানীয় বাসিন্দা মাহবুবার রহমান স্বাধীন বাংলা নিউজ-২৪ কে বলেন, ‘একজন প্রধান শিক্ষক ঠিকাদারি করলে স্কুলে কখন সময় দেবে। কারণ স্কুলের শিক্ষার্থীদের তো দেখাশোনার দায়িত্ব তার, অন্যান্য শিক্ষকরা ক্লাস করাচ্ছেন কি-না সেটাও তদারকির দায়িত্ব তার। উনি কোন সময়ে স্কুলে সময় দেবে আর কোন সময়ে ঠিকাদারি করবে এটা অভিভাকদের বুঝে আসছে না। আমাদের কাছে মনে হচ্ছে, ঠিকাদারি করা উনার উচিত না।’
বিদ্যালয়টির পরিচালনা কমিটির সাবেক সভাপতি ফিরোজ আল মামুনের মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করেও তাকে পাওয়া যায়নি।
তবে সকল অভিযোগ অস্বীকার করে প্রধান শিক্ষক হায়াতুল আলম স্বাধীন বাংলা নিউজ-২৪ কে বলেন, ‘ঠিকাদারির লাইসেন্সটা ছেলের নামে আছে। আমি মাঝেমধ্যে দেখাশোনা করি। আর আমার বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ তোলা হচ্ছে তা মিথ্যা বানোয়াট।’
নীলফামারী জেলা শিক্ষা অফিসার হাফিজুর রহমান স্বাধীন বাংলা নিউজ-২৪ বলেন, ‘এরকমটা যদি হয়ে থাকে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category